Love for Beloved Chhayani Union

Friday, 22 July 2016

বাংলাদেশকে খোলা চিঠি ২০ জুলাই ২০১৬, ০০:১৫ .যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুল অব পাবলিক পলিসি থেকে স্নাতক সামিরা খান

Post Collected from GBC Fb Group

বাংলাদেশকে খোলা চিঠি
২০ জুলাই ২০১৬, ০০:১৫
.যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুল অব পাবলিক পলিসি থেকে স্নাতক সামিরা খান ক্রিয়েটিভ রাইটিংয়ে ফুলব্রাইট বৃত্তি পেয়ে কাজ করেছিলেন বাংলাদেশে। বর্তমানে ভারতের মুম্বাইয়ে সামাজিক খাতের একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক হিসেব কাজ করছেন তিনি। ১ জুলাই গুলশান হামলার ঘটনার পর এই ভারতীয়–পাক–আমেরিকান একটি খোলা চিঠি লিখেছেন বাংলাদেশের মানুষের উদ্দেশে। চিঠিটি এখানে ছাপা হলো।
প্রিয় বাংলাদেশ,
বছর দশেক আগে ফুলব্রাইট বৃত্তির জন্য আবেদন করার সময় অন্যদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, ‘তোমার’ কাছে যাওয়া উচিত হবে কি না। প্রায় সবাই বলেছিল, ‘ওটা তো খুব গরিব দেশ। তুমি কি সত্যি সত্যি ওখানে যেতে চাও?’ তাদের কথা শুনে আমার মনের মধ্যে ভেসে উঠছিল দুর্ভিক্ষ ও ক্ষুধাপীড়িত একটা ছবি। তবে আমার পাকিস্তানি বাবার উপলব্ধি ছিল অন্যরকম। তিনি বলেছিলেন, ‘তোমার ঠিকই ভালো লাগবে। দেশটা একদম পাকিস্তানের মতোই।’ সেই আশ্বাসে আমার আস্থা বেড়ে গেল—আর আমি তোমার সঙ্গে যোগ দিতে তৎপর হলাম।
যাই হোক, ঢাকায় সাম্প্রতিক হামলার ঘটনার পর সেই সব স্মৃতি দ্রুত ফিরে এল। আবারও মনে পড়ল যে তোমরা আর যা-ই হও, ‘পাকিস্তানের মতো’ নও। অন্তত তোমরা তখন পিছু হটোনি। আর একটু পরেই বুঝতে পারবে আমি কী বলতে চাইছি...
আমি একজন আমেরিকান, পাকিস্তানি ও ভারতীয় বংশোদ্ভুত। ওই দুটি দেশেই বসবাস এবং কাজ করেছি আমি। মূলত আমি ফুলব্রাইটের পাকিস্তান প্রোগ্রামে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ওটা সাময়িক বন্ধ রেখেছিল। তারপর আমি ভারতে গিয়ে কাজটা করার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু তখন শুনলাম, মুসলিমঘেঁষা নামের কোনো নারীর পক্ষেÿভারতে গিয়ে জেন্ডার-সহিংসতার ওপর কাজ করার ভিসা পাওয়া প্রায় অসম্ভব হবে। তাই দক্ষিণ এশিয়ার প্রতি আমার বিশেষ আগ্রহ থাকায় তোমাকেই (বাংলাদেশ) আমার ‘খুব কাছের’ এবং তুলনামূলক সহজ গন্তব্য মনে হলো।
তোমরা যে কেবল ‘একদম পাকিস্তানের মতো নও’ তা নয়, আমি যে ছয়টি দেশে ভিনদেশি হিসেবে থেকেছি সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে অতিথিপরায়ণ দেশ। তোমরা নিজেদের নম্রতা আর সুন্দর সত্তা, বিস্ময়কর উদারতা আর উষ্ণতাসহযোগে বিদেশিদের আপন করে নিতে পার সব ক্ষেত্রে। নিজেদের এই গুণের কথাটা হয়তো তোমাদের অজানা। কারণ, মানুষ কখনো কখনো খুব বেশি আত্মসমালোচনাকারী হয়ে থাকে, যখন সবকিছু আমাদের আশা অনুযায়ী ঘটে না।
জীবনের কয়েকটি বছর আমি পাকিস্তানের লাহোরে একটি মার্কিন হাইস্কুলে কাটিয়েছি। সে সময় আমরা কখনোই রাস্তায় হাঁটিনি, এমনকি দিনের উজ্জ্বল আলোতেও নয়। আমার স্কুল বন্ধ করে দিতে পারে এবং সেখানে নিরাপত্তাজনিত হুমকি আছে—প্রভৃতি শুনতে শুনতে বড় হয়েছি। অশ্বেতাঙ্গ বিদেশি হিসেবে রেস্তোরাঁয় গিয়ে খাওয়াদাওয়া করব সে সুযোগও ছিল না। সব সময় মনে হতো, বদ্ধ একটা খাঁচার মধ্যে ঘুরছি।
এখন আমি একজন বিদেশি কর্মী হিসেবে মুম্বাইয়ে থাকি। এখানে আমাকে কেউ আলাদা করে দেখে না। কারণ, সারা বিশ্বের অনেক দেশ থেকে আসা লোকজন এখানে একসঙ্গে আছেন। ভারতের দুয়ারে অতিথির অবস্থাটা ঠিক কেমন, তা নিয়ে কোনো বাস্তব ধারণাই বোধ হয় তৈরি হয়নি। আমিও একদঙ্গল মানবপ্রবাহের অংশমাত্র।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) স্থানীয় লোকজন নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত থাকেন, আর ধনসম্পদের বাহুল্য সেখানে বড্ড বেশি। সবকিছুই তাঁরা কিনে নিতে চান। মনে পড়ে, সেখানে একটি বিলাসবহুল গাড়ি এসে আচমকা আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল। দিনের আলোতেই আমাকে তুলে নিতে চাইছিল। বিনিময়ে আমাকে অর্থ সেধেছিল ওরা। কারণটা সহজ, বিদেশি নারীদের মতো তখন আমার পরনেও ছিল জিনস। জর্ডানেও একই ধরনের অস্বস্তি বোধ করেছিলাম। সেখানে প্রথমসারির আরবদের দাপট আছে। বাকি সবার মিসরীয় থেকে শুরু করে আমার মতো মানুষের, মূল্য খুব সামান্যই ছিল।
আমি কোনো তুলনা করছি না, সত্যিই না। কিন্তু আমি তোমাদের জানাতে চাই যে তোমরা অন্যরকম। আমাদের সবারই কিছু শক্তি আর কিছু দুর্বলতা আছে। আর একজন বহিরাগত হিসেবে আমি তোমাদের বলতে চাই অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে—তোমরা স্বকীয়।
বিশেষ করে, আমি তোমাদের কাছে গিয়েছিলাম জেন্ডার-সহিংসতার একটি স্বতন্ত্র ধরন সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে। তোমরা এ ধরনের সহিংসতা মোকাবিলায় খুব ভালো করছ। ওটা ছিল খুবই স্বাভাবিক; মানুষ এ রকমই তো করে: শিখতে আসে, যাচাই করে এবং প্রায় সময়ই ভুল থেকে শেখে। আমি শুনেছিলাম, বাংলাদেশকে একসময় মানুষের পরীক্ষাগার বলা হতো। বিশ্বে আপনি এমন একটা দেশ কোথায় পাবেন, যেখানে লোকজন অচেনা বিদেশিদের আপন করে নেয় আর নিজেদের আন্তরিকতা দিয়ে ভিনদেশিদের মনে একটা দীর্ঘস্থায়ী জায়গা করে নিতে পারে? তোমরা এতটাই দূরদর্শী।
আমার বুঝতে বেশি দেরি হয়নি যে তোমরা যে-কারও সঙ্গে নির্দ্বিধায় মিশতে পার। আর অন্যকে দেওয়ার জন্য তোমাদের আছেও অনেক বেশি। তোমরা যদি দেয়াল তৈরি করে রাখতে, অ্যাসিড-সহিংসতা নিয়ে এত কিছু আমি শিখতে পারতাম না। এ ছাড়া দেশি-বিদেশি সবার প্রতি আতিথেয়তার বিষয়টি বাংলাদেশি সংস্কৃতির গভীরে বিস্ময়করভাবে গেঁথে আছে। ধনী বা গরিব, গ্রাম অথবা শহর—যা-ই হোক, আমি একটা বাড়ি থেকেও না খেয়ে ফিরিনি। প্রথম যে বাংলা শব্দটি শিখেছি, সেটি হলো ‘খাব’।
একজন ব্যক্তি সম্পর্কে মানুষ জানতে চায়; তিনি কে, কোথা থেকে এসেছেন প্রভৃতি। বাংলাদেশিরা সাংস্কৃতিকভাবেই কৌতূহলী, এমনকি আমার পরিচয় এবং বংশ সম্পর্কে, যেহেতু পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে বিচ্ছিন্নতা ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে সহিংস ঘটনাগুলোর একটি।
শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ব্র্যাকের জন্মভূমি। দারিদ্র্য বিমোচনে এই প্রতিষ্ঠানের অসাধারণ অঙ্গীকার এবং ব্যাপক প্রভাব রয়েছে।
তোমরা মানবাধিকার এবং উন্নয়ন ব্যবস্থাপনায় খুব সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছ, আর এর একটা অংশ হলো, বিশ্বকে এতটা উদারভাবে গ্রহণ করার ক্ষমতা। নিজেদের নিয়ে তোমাদের অবশ্যই গর্ব করা উচিত।
বাংলাদেশিদের যেসব প্রথা আমি প্রথম খেয়াল করেছি, সেগুলোর একটি হলো তুলনামূলক কমবয়সীরা বড়দের পা ছুঁয়ে সালাম করে। এটা দেখে প্রথমে আমি খুবই অবাক হই। কারণ, এই প্রথা ইসলামবিরোধী বলেই আমাকে ঐতিহাসিকভাবে বলা হয়েছিল। তোমরা (বাংলাদেশের মানুষ) এটাকে দক্ষিণ এশীয় ইতিহাস-সংস্কৃতির অংশ বানিয়ে দিয়েছ চমৎকারভাবে। আর এ রকম পা-ছুঁয়ে সালাম করাকে সম্মান জানানোর রীতিতে পরিণত করেছ।
বাংলাদেশে তোমরা হিন্দু-মুসলিম পাশাপাশি ছিলে এবং আছ। একই গ্রামে বসবাস করছে এই দুই সম্প্রদায়ের মানুষ এবং তাদের ছেলেমেয়েরা একই স্কুলে একসঙ্গে যাচ্ছে। গ্রামবাসী মুসলিমরা প ্রকাশ্যে শাড়ি পরছেন, যা আমি পাকিস্তানি মুসলিমদের মধ্যে কখনো দেখিনি। সেখানে তাঁরা নিজেদের প্রথার চর্চায় অনেক বেশি সীমাবদ্ধ। তোমাদের দেশে জাতিগত সহিংসতার ঘটনা খুবই বিরল, যা পাকিস্তানে সব সময়ই বাড়ছে। এটা তোমাদের সহনশীলতার একটা বড় বৈশিষ্ট্য।
বৈচিত্র্যময় ও বহুত্ববাদী বৈশিষ্ট্যের শিকড় তোমাদের শক্তিশালী আত্মপরিচয়ের কতটা গভীরে প্রোথিত, তা দেখে আমি অবাক না হয়ে পারি না। তোমাদের সেই আত্মপরিচয়ের ওপরই ধর্ষণ ও নিপীড়ন চালানো হয়েছিল, যখন তোমরা পাকিস্তানের একটি অংশ ছিলে। ধর্ষণের বিভীষিকার যেসব ছবি আমি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে দেখেছি, কখনো ভুলব না। নিজ সংস্কৃতি, নিজ জনগণ এবং বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার অর্জনের জন্য তোমরা বড় মতভেদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে বিজয়ী হয়েছ। এসব কখনোই ভুলবার নয়।
যাই হোক, ১ জুলাইয়ের ঘটনা আমার মনে আরেকটি সন্ধিক্ষণের জন্ম দেয়। আমি কিছুক্ষণের জন্য থেমে গিয়েছিলাম, জীবনে প্রথমবার—আপনাদের কথা ভেবে...।
আমি ঢাকায় যাঁদের চিনি তাঁদের জন্য হলি আর্টিজান বেকারির ঘটনাটা ছিল অবিশ্বাস্য রকমের ভীতিকর। গুলশানেই আমি থাকতাম। ওই সমৃদ্ধ এলাকায় বিদেশিদের যাতায়াত বেশি। যাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে আমিও থাকতে পারতাম, বা আমার বন্ধুরা।
তবে সবচেয়ে ভীতিকর ব্যাপারটা হলো, এ রকম হামলায় বিদেশিদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। অথচ তাঁরা এমন একটা দেশে এসেছেন, যেখানে বিভিন্ন শিল্পের বিকাশের পাশাপাশি বৈদেশিক বাণিজ্যকে স্বাগত জানানো হয়। পাশাপাশি সামাজিক প্রভাব এবং উন্নয়ন সারা বিশ্বেই বন্ধুভাবাপন্ন। এমন একটা দেশের ওপর এ ধরনের সহিংসতা সত্যিকার অর্থেই নেতিবাচক। এটা তোমাদের ধ্বংস করে দিতে পারে।
তারপরও, না, বাংলাদেশ, তুমি একদমই পাকিস্তানের মতো নও...এখনও পর্যন্ত না। তাই, কেউ যেন উল্টোটা বলার সুযোগ না পায়। খুব বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই থামাতে হবে। ঈদ মোবারক।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: আশিস আচার্য
সূত্র: হাফিংটন পোস্ট, ০৫ জুলাই ২০১৬
সূত্র্র: দৈনিক প্রথমআলো,২০ জুলাই ২০১৬
LikeShow more reactions
Comment
Comments
Mohammad Jahangir Alam বাংলাদেশ সম্পর্কে একজন পাকিস্তানীর চমৎকার বিশ্লেষণ। পুরোটা পড়লাম, দারুন লেগেছে, এত কিছু আমরা বাংলাদেশী জানা ছিলো না। ধন্যবাদ Rafiqul Alam Pavel এইরকম একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
Md Zohir Himm bahi, amra 2 sata bujte sssta korena khokono

No comments:

Post a Comment

Thanks for your comment.

 

SSC Chemistry

SSC Chemistry

 
Blogger Templates