Post Collected from GBC Fb Group
হয় জঙ্গি দমন, নয় জাতীয় মরণ
ইয়াসিন এলাহি | অতিথি লেখক
প্রকাশ: ১৯২১ ঘণ্টা, বৃহস্পতিবার ২১ জুলাই ২০১৬ || সর্বশেষ সম্পাদনা: ১৯২৬ ঘণ্টা, বৃহস্পতিবার ২১ জুলাই ২০১৬
প্রকাশ: ১৯২১ ঘণ্টা, বৃহস্পতিবার ২১ জুলাই ২০১৬ || সর্বশেষ সম্পাদনা: ১৯২৬ ঘণ্টা, বৃহস্পতিবার ২১ জুলাই ২০১৬
![]() |
বিগত বছরগুলোতে প্রকাশিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক উন্নয়ন সূচকের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন খাতে নজরকাড়া উন্নয়ন করেছে। এমজিডি লক্ষ্যমাত্রা, বিশ্বব্যাংকের পঞ্চবার্ষিকী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের বার্ষিক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার প্রতিবেদনেও এসেছে বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধি, শিশু-মাতৃ মৃত্যু হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, সেনিটেশন, সামাজিক-অর্থনৈতিক অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্য হ্রাস ও শিক্ষার হার বৃদ্ধিসহ অন্তত ৩৯টি উন্নয়ন খাতে ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছে। যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের আশাবাদকেও অতিক্রম করেছে। এসব অর্থনৈতিক সাফল্য বিচারে বিভিন্ন সংস্থা বাংলাদেশকে ভবিষ্যতের ‘ইমার্জিং ইকোনমিক টাইগার, ইনভেস্টমেন্ট হাব, টাইগার ইকোনমি, নিউ ইকোনমিক পাওয়ার, ইকোনমিক সেনসেশন’ সহ বিভিন্ন বিশেষণে ভূষিত করেছে। এ বিশেষণ বাংলাদেশের মানুষের শ্রমের ফসল। কিছু কিছু খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-পাকিস্তানকেও অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছে। যা পুরো জাতির জন্য অহংকারের একটি বিষয়।
যাহোক, সামগ্রিক উন্নয়ন যখন দ্রুত গতিতে ধাবমান তখন গুলশানে জঙ্গি হামলার মত ঘটনা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক উন্নয়নকে বিশ্বের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। এ চ্যালেঞ্জ শক্ত হাতে মোকাবেলা না করা গেলে বিশ্বের দরবারে জাতির ইমেজ পাকিস্তান-আফগানিস্তান, সিরিয়া বা ইরাকের কাতারে গিয়ে দাঁড়াবে। যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায়না। সবাইকে মেনে নিতে হবে এটা একটা জাতীয় সংকট। যা সরকারের একার পক্ষে মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। এ সংকট মোকাবেলায় দেশের সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। ভুলে গেলে চলবেনা, এ যুদ্ধে হেরে গেলে শুধু সরকার নয় পুরো বাংলাদেশ রাষ্ট্র হেরে যাবে। তাই যে কোনো উপায়ে জাতীয় এ পতন রুখতে হবে। হয় সামগ্রিকভাবে জঙ্গি দমন করতে হবে নয়তো জাতীয় মরণ নিশ্চিত।
দেশের সাম্প্রতিক জঙ্গিবাদ দমনে নিম্মোক্ত সাতটি উপায় অনুসরণ করা যেতে পারে-
১. জঙ্গিবাদের অর্থনৈতিক প্রবাহ বন্ধকরণ: বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশের জঙ্গিরা মূলত অর্থ পায় সৌদী আরব, আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও পাাকিস্তান থেকে। এসব অর্থের মূল যোগানদাতা সেখানে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তাই জঙ্গি অর্থের এ উৎস দমনে দক্ষ মনিটরিং ইউনিট শুধু দরকারই নয়, সময়ের দাবিও বটে।
২. বিয়ে প্রক্রিয়া স্বল্প ব্যয়বহুল করণ: সমাজতাত্ত্বিক বিভিন্ন গবেষণায় অসংখ্যবার প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশের যুবকরা দারুণভাবে যৌন অবদমনের শিকার হয়। সামাজিক বিভিন্ন প্রতিবন্ধকার কারণে তারা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও যৌবনকে উপভোগ করতে পারেনা। আর এদেশে যৌনতা উপভোগের প্রায় একমাত্র মাধ্যম হলো বিয়ে। যা করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক জটিলতায় জর্জরিত। যা অসংখ্য দরিদ্র ও বেকার মানুষের পক্ষে করা প্রায় অসম্ভব। তাই বিয়েকে আরো সহজতর, স্বল্প ব্যয়বহুল ও অনানুষ্ঠানিক করা গুরুত্বপূর্ণ।
৩. এলাকাভিত্তিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে সরকারিভাবে উৎসাহিতকরণ: এদেশে আশির দশকেও এলাকাভিত্তিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড জনপ্রিয় ছিল। পরবর্তীতে তৃণমূলে হিংসার রাজনীতি চালু হলে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ঝিমুতে ঝিমুতে এক সময় নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থা দমনে এই মুহুর্তে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বিকাশের বিকল্প নেই।
৪. মিডিয়ার দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন: গুলশান ঘটনার পর উড়ো বার্তায় পাঠানো পাঠানো জঙ্গিদের বিভিন্ন হুমকিকে মিডিয়াগুলো এতটাই গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে যে গুটি কয়েক জঙ্গি পুরো জাতিকে ভয় পাইয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। আর এ ভয় চাষাবাদের পুরো কৃতিত্ব আমাদের মিডিয়ার। আমি হলপ করে বলতে পারি মিডিয়া এর প্রভাব না বুঝেই তা করেছে। তাই মিডিয়ার উচিৎ জঙ্গিদের অপ্রয়োজনীয় হুমকিকে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে ভয়ের সংস্কৃতি প্রশমন করা।মনে রাখতে হবে জঙ্গিদের হুমকিকে যত বেশি কাভারেজ দেয়া হবে জঙ্গিরা ততবেশি উস্কানি পাবে। তাই মিডিয়াকে নির্ধারণ করতে হবে তারা উস্কানিদাতা না কী প্রশমনকারী হবেন!
৫. আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আস্থার জায়গায় উন্নীত করতে হবে: কোন এক অজ্ঞাত কারণে দেশের পুলিশ, র্যাবসহ অন্যান্য বাহিনীকে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী জাতির সামনে ভিলেন বা সরকারের তল্পিতল্পা বাহক হিসেবে উপস্থাপনে সর্বস্ব উজাড় করে প্রচারণা চালাচ্ছে। সরকার ও বিবেকবান মানুষদের এ প্রপাগান্ডা রুখে দিতে এগিয়ে আসতে হবে। কেননা, জঙ্গি দমনে একমাত্র পুলিশ-র্যাবই তাদের সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে বদ্ধপরিকর।জঙ্গিদের সম্পর্কে পাওয়া ন্যুনতম তথ্যটুকুকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে সাহায্য করলে সমস্যা সমাধান সম্ভব।
৬. বুদ্ধিজীবীদের দায়িত্ব পালন: ইটালীয় তাত্ত্বিক আন্তনিও গ্রামসি’র মতে, ‘সে বুদ্ধিজীবী নয়, যে জাতির সংকটে চুপ থাকে। ‘জঙ্গিসৃষ্ট ভয়ের সংস্কৃতি থেকে জাতিকে বের করে আনতে বুদ্ধিজীবীদের রাস্তায় নামা অতীব জরুরি।তাছাড়া অতীতের ‘ডিভাইড এন্ড বেনিফিট পলিসি’ থেকেও তাদের বেরিয়ে এসে আপাতত জাতীয় স্বার্থে কথাবার্তা বলতে হবে।
৭. ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মাদ্রাসা শিক্ষকদের দায়িত্ববান হতে হবে: এই মুহুর্তে আমাদের দেশের বিশাল সংখ্যক ইমাম, মুয়াজ্জিম ও মাদ্রাসা শিক্ষকদের প্রত্যেককে এক একজন শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে তাদের জীবনাচরণ ও কথাবার্তায়। জাতির সামনে ঘৃণার সংস্কৃতির পরিবর্তে ইসলামের সুমহান শান্তি ও ভ্রাতৃবোধের বাণী জোরালোভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে দাড়িয়ে গেলে পশ্চিমারা এদেশে আফগানিস্তান-সিরিয়ার মতো বোমা ফেলতে খুব বেশিদিন অপেক্ষা করবেনা। ভুলে গেলে চলবেনা যে, ‘নগর পুড়লে দেবালয় কিন্তু এড়ায়না ।
*গবেষক ও শিক্ষার্থী, মাস্টার্স অব মিডিয়া, রয়্যাল মেলবোর্ন ইনফরমেশন টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি (আরএসআাইটি), মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া।
No comments:
Post a Comment
Thanks for your comment.