: ঘটনা এক :
- ডাক্তার, আমার ছেলের কী হয়েছে?
- জ্বর হয়েছে।
- হে আল্লাহ এ কী অসুখ দিলা আমার ছেলেরে?
কী পাপ করছিলাম আমি? আমার এখন কী হবে?
- যা হবার হয়ে গেছে। ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে
যান। যা খেতে চায় খাওয়ান। চেষ্টা করুন
শেষক'টা দিন যাতে ভালো কাটে তার।
: ঘটনা দুই :
- আমার কী হয়েছে ডক্টর?
- আপনার হাতে ফোঁড়া হয়েছে।
- হোয়াট? আর ইউ শিউর?
- ইয়েস।
- সিংগাপুর নাকি মাদ্রাজ, কোথায় ট্রিটমেন্ট
নেবো এখন?
- আই অ্যাম এক্সট্রিমলি সরি। কোথাও আপনার
রোগের ট্রিটমেন্ট আর পসিবল না। আল্লাহকে
ডাকুন।
জানি, কিছুটা অবিশ্বাস্য শোনাচ্ছে উপরের
ঘটনাগুলো। কিন্তু আমরা সকলেই মনে হয় খুব দ্রুত
এরকম ঘটনার চরিত্র হতে যাচ্ছি। সামান্য সর্দি
কাশি হবে, হাত পা কাটবে, আমাদের জ্বর উঠবে
তারপর আমরা টুপ করে মরে যাবো। কোনো
এন্টিবায়োটিকই আর কাজ করবেনা।
এন্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেছিলেন
আলেকজান্ডার ফ্লেমিং। ফ্লেমিং বলেছিলেন,
'এই এন্টিবায়োটিকের কারণে আজ কোটি কোটি
লোক বেঁচে যাবে। অনেক বছর পর এগুলো আর কাজ
করবেনা। তুচ্ছ কারণে কোটি কোটি লোক মারা
যাবে আবার।'
বাড়িতে এসেছি গতকাল। আজ এক আত্মিয়ের
'কালচার এন্ড সেনসিটিভিটি' রিপোর্ট দেখে
বুঝলাম, কোটি কোটি লোক মরে যাবার সময় বোধ
হয় এসে গেছে। মাত্র কয়েকটা ছাড়া আর কোনো
এন্টিবায়োটিকই ঐ আত্মিয়ের শরীরে কাজ
করেনা!
কী ভয়ংকর একটা ব্যাপার!
আত্মীয়কে জিজ্ঞেস করলাম, 'এর আগে ওষুধ টষুধ
খেয়েছিলেন?'
বললেন, 'ফার্মেসি থেকে প্রায়ই এনে খাই।'
এই 'ফার্মেসি থেকে এনে খাওয়াটা'ই হলো
সর্বনাশের মূল।
এন্টিবায়োটিক খাওয়ার কিছু নিয়ম আছে। একটা
নির্দিষ্ট ডোজে, একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত
এন্টিবায়োটিক খেতে হয়। না খেলে যেটা হতে
পারে সেটাকে বলা হয় 'এন্টিবায়োটিক
রেজিসটেন্স'।
নিজেও বুঝি কম। যেটুকু বুঝি, সহজ করে বলার
চেষ্টা করি।
ধরি, আমার দেহে এক লক্ষ ব্যাকটেরিয়া আছে।
এগুলোকে মারার জন্য আমার ১০টা এম্পিসিলিন
খাওয়া দরকার। এম্পিসিলিন এক প্রকার
এন্টিবায়োটিক। খেলাম আমি ৭ টা।
ব্যাকটেরিয়া মরলো ৭০ হাজার এবং আমি সুস্থ্য
হয়ে গেলাম।
৩০ হাজার ব্যাকটেরিয়া কিন্তু রয়েই গেলো।
এগুলো শরীরে ঘাপটি মেরে বসে জটিল এক কান্ড
করলো নিজেরা নিজেরা।
তারা ভাবলো, যেহেতু এম্পিসিলিন দিয়ে
আমাদের ৭০ হাজার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে
অতএব আমাদেরকে এম্পিসিলিন প্রুফ জ্যাকেট
পরতে হবে এবার। প্ল্যান করে থেমে থাকেনা
এরা, বরং সত্যি সত্যি জ্যাকেট তৈরি করে
ফেলে এই ব্যাকটেরিয়াগুলো। এরা
বাচ্চাকাচ্চাও পয়দা করে একই সময়ে।
বাচ্চাদেরকেও সেই জ্যাকেট পরিয়ে দেয়।
এর ফলে যেটা হয়, পরেরবার এম্পিসিলিন নামক
এন্টিবায়োটিকটা আর কাজ করেনা।
সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে, জ্যাকেট পরা
ব্যাকটেরিয়াগুলো কেবল ঐ ব্যাক্তির শরীরেই
বসে থাকেনা। তিনি হাঁচি দেন, কাশী দেন,
ব্যাকটেরিয়াগুলো ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়।
একসময় পুরো এলাকায়ই আর ঐ এন্টিবায়োটিক
কাজ করেনা। যারা খুব নিয়ম করে ওষুধ খান
তারাও বিপদে পড়ে যান সবার সাথে।
আমরা খুব ভয়ংকর একটা সময়ের দিকে এগিয়ে
যাচ্ছি দ্রুত। ব্যাকটেরিয়া আর তাদের বিভিন্ন
'জ্যাকেট'এর তুলনায় এন্টিবায়োটিকের সংখ্যা
খুব বেশি না।
অনেক এন্টিবায়োটিক এখন আর কাজ করেনা,
বাকিগুলোর ক্ষমতাও কমে আসছে। আমাদের বড়
বড় হসপিটাল থাকবে, সেখানে এফসিপিএস,
এমডি, পিএইচডি করা ডাক্তাররা থাকবেন কিন্তু
কারোরই কিছু করার থাকবেনা। সামান্য
সর্দীতেই রোগী মরে সাফ হয়ে যাবে।
উন্নত বিশ্বের চিকিৎসা ব্যাবস্থা আলাদা।
তারা নিয়ম মেনে ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওষুধ
খায়।
বিপদে আছি আমরা। 'মেডিসিনের বাইবেল'
নামে পরিচিত ডেভিডসের বইয়েও আমাদের এই
উপমহাদেশের উল্লেখ আছে কথা আলাদা করে।
অনেক ট্রিটমেন্টে বলা হয়েছে, 'দিস অরগানিজম
ইজ রেজিসটেন্ট অ্যাগেইন্সট দিজ ড্রাগস ইন
ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট...'
টিভি পত্রিকায় নানান বিষয়ে মানুষকে সচেতন
করা হয়।
বাথরুম করে হাত ধুতে হবে, কাশি হলে ডাক্তার
দেখাতে হবে, নিরাপদ পানি খেতে হবে
ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এন্টিবায়োটিক নিয়ে
কোনো কিছু আজও চোখে পড়েনি। অথচ এটা
অন্যগুলোর চেয়েও জরুরী। এন্টিবায়োটিক কাজ
না করলে এত সচেতনতা দিয়েও আর লাভ হবেনা।
চিকিৎসা ব্যাবস্থার সাথে যারা জড়িত
তাদেরকে এখনই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবা উচিত।
ফার্মেসিওয়ালা কর্তৃক ওষুধ দেয়া বন্ধ করতে
হবে, এন্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার বিষয়ে
সচেতনতা বাড়াতে হবে। নাহলে আমাদের
ভবিষ্যত অন্ধকার।
- ডাক্তার, আমার ছেলের কী হয়েছে?
- জ্বর হয়েছে।
- হে আল্লাহ এ কী অসুখ দিলা আমার ছেলেরে?
কী পাপ করছিলাম আমি? আমার এখন কী হবে?
- যা হবার হয়ে গেছে। ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে
যান। যা খেতে চায় খাওয়ান। চেষ্টা করুন
শেষক'টা দিন যাতে ভালো কাটে তার।
: ঘটনা দুই :
- আমার কী হয়েছে ডক্টর?
- আপনার হাতে ফোঁড়া হয়েছে।
- হোয়াট? আর ইউ শিউর?
- ইয়েস।
- সিংগাপুর নাকি মাদ্রাজ, কোথায় ট্রিটমেন্ট
নেবো এখন?
- আই অ্যাম এক্সট্রিমলি সরি। কোথাও আপনার
রোগের ট্রিটমেন্ট আর পসিবল না। আল্লাহকে
ডাকুন।
জানি, কিছুটা অবিশ্বাস্য শোনাচ্ছে উপরের
ঘটনাগুলো। কিন্তু আমরা সকলেই মনে হয় খুব দ্রুত
এরকম ঘটনার চরিত্র হতে যাচ্ছি। সামান্য সর্দি
কাশি হবে, হাত পা কাটবে, আমাদের জ্বর উঠবে
তারপর আমরা টুপ করে মরে যাবো। কোনো
এন্টিবায়োটিকই আর কাজ করবেনা।
এন্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেছিলেন
আলেকজান্ডার ফ্লেমিং। ফ্লেমিং বলেছিলেন,
'এই এন্টিবায়োটিকের কারণে আজ কোটি কোটি
লোক বেঁচে যাবে। অনেক বছর পর এগুলো আর কাজ
করবেনা। তুচ্ছ কারণে কোটি কোটি লোক মারা
যাবে আবার।'
বাড়িতে এসেছি গতকাল। আজ এক আত্মিয়ের
'কালচার এন্ড সেনসিটিভিটি' রিপোর্ট দেখে
বুঝলাম, কোটি কোটি লোক মরে যাবার সময় বোধ
হয় এসে গেছে। মাত্র কয়েকটা ছাড়া আর কোনো
এন্টিবায়োটিকই ঐ আত্মিয়ের শরীরে কাজ
করেনা!
কী ভয়ংকর একটা ব্যাপার!
আত্মীয়কে জিজ্ঞেস করলাম, 'এর আগে ওষুধ টষুধ
খেয়েছিলেন?'
বললেন, 'ফার্মেসি থেকে প্রায়ই এনে খাই।'
এই 'ফার্মেসি থেকে এনে খাওয়াটা'ই হলো
সর্বনাশের মূল।
এন্টিবায়োটিক খাওয়ার কিছু নিয়ম আছে। একটা
নির্দিষ্ট ডোজে, একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত
এন্টিবায়োটিক খেতে হয়। না খেলে যেটা হতে
পারে সেটাকে বলা হয় 'এন্টিবায়োটিক
রেজিসটেন্স'।
নিজেও বুঝি কম। যেটুকু বুঝি, সহজ করে বলার
চেষ্টা করি।
ধরি, আমার দেহে এক লক্ষ ব্যাকটেরিয়া আছে।
এগুলোকে মারার জন্য আমার ১০টা এম্পিসিলিন
খাওয়া দরকার। এম্পিসিলিন এক প্রকার
এন্টিবায়োটিক। খেলাম আমি ৭ টা।
ব্যাকটেরিয়া মরলো ৭০ হাজার এবং আমি সুস্থ্য
হয়ে গেলাম।
৩০ হাজার ব্যাকটেরিয়া কিন্তু রয়েই গেলো।
এগুলো শরীরে ঘাপটি মেরে বসে জটিল এক কান্ড
করলো নিজেরা নিজেরা।
তারা ভাবলো, যেহেতু এম্পিসিলিন দিয়ে
আমাদের ৭০ হাজার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে
অতএব আমাদেরকে এম্পিসিলিন প্রুফ জ্যাকেট
পরতে হবে এবার। প্ল্যান করে থেমে থাকেনা
এরা, বরং সত্যি সত্যি জ্যাকেট তৈরি করে
ফেলে এই ব্যাকটেরিয়াগুলো। এরা
বাচ্চাকাচ্চাও পয়দা করে একই সময়ে।
বাচ্চাদেরকেও সেই জ্যাকেট পরিয়ে দেয়।
এর ফলে যেটা হয়, পরেরবার এম্পিসিলিন নামক
এন্টিবায়োটিকটা আর কাজ করেনা।
সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে, জ্যাকেট পরা
ব্যাকটেরিয়াগুলো কেবল ঐ ব্যাক্তির শরীরেই
বসে থাকেনা। তিনি হাঁচি দেন, কাশী দেন,
ব্যাকটেরিয়াগুলো ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়।
একসময় পুরো এলাকায়ই আর ঐ এন্টিবায়োটিক
কাজ করেনা। যারা খুব নিয়ম করে ওষুধ খান
তারাও বিপদে পড়ে যান সবার সাথে।
আমরা খুব ভয়ংকর একটা সময়ের দিকে এগিয়ে
যাচ্ছি দ্রুত। ব্যাকটেরিয়া আর তাদের বিভিন্ন
'জ্যাকেট'এর তুলনায় এন্টিবায়োটিকের সংখ্যা
খুব বেশি না।
অনেক এন্টিবায়োটিক এখন আর কাজ করেনা,
বাকিগুলোর ক্ষমতাও কমে আসছে। আমাদের বড়
বড় হসপিটাল থাকবে, সেখানে এফসিপিএস,
এমডি, পিএইচডি করা ডাক্তাররা থাকবেন কিন্তু
কারোরই কিছু করার থাকবেনা। সামান্য
সর্দীতেই রোগী মরে সাফ হয়ে যাবে।
উন্নত বিশ্বের চিকিৎসা ব্যাবস্থা আলাদা।
তারা নিয়ম মেনে ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওষুধ
খায়।
বিপদে আছি আমরা। 'মেডিসিনের বাইবেল'
নামে পরিচিত ডেভিডসের বইয়েও আমাদের এই
উপমহাদেশের উল্লেখ আছে কথা আলাদা করে।
অনেক ট্রিটমেন্টে বলা হয়েছে, 'দিস অরগানিজম
ইজ রেজিসটেন্ট অ্যাগেইন্সট দিজ ড্রাগস ইন
ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট...'
টিভি পত্রিকায় নানান বিষয়ে মানুষকে সচেতন
করা হয়।
বাথরুম করে হাত ধুতে হবে, কাশি হলে ডাক্তার
দেখাতে হবে, নিরাপদ পানি খেতে হবে
ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এন্টিবায়োটিক নিয়ে
কোনো কিছু আজও চোখে পড়েনি। অথচ এটা
অন্যগুলোর চেয়েও জরুরী। এন্টিবায়োটিক কাজ
না করলে এত সচেতনতা দিয়েও আর লাভ হবেনা।
চিকিৎসা ব্যাবস্থার সাথে যারা জড়িত
তাদেরকে এখনই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবা উচিত।
ফার্মেসিওয়ালা কর্তৃক ওষুধ দেয়া বন্ধ করতে
হবে, এন্টিবায়োটিকের সঠিক ব্যবহার বিষয়ে
সচেতনতা বাড়াতে হবে। নাহলে আমাদের
ভবিষ্যত অন্ধকার।
No comments:
Post a Comment
Thanks for your comment.