Post Collected from GBC Fb Group
তারাবীহ নামাযের রাকআত সংখ্যা
রামাদানুল মুবারাক অত্যাসন্ন। ফেসবুক ও ইউটিউবে তারাবী নামাযের রাকাত বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে। নিরাসক্ত দৃষ্টিভঙ্গিতে আমি এ বিষয়ের ওপর আলোকপাত করছি। পোস্টটি দীর্ঘ হলেও ধৈর্য সহকারে পড়ার অনুরোধ করছি।
ক. ইমাম আবু হানিফা, মালিক, শাফি‘ঈ, আহমদ ইবন হাম্বল ও দাউদ জাহেরীর (রাহ) মতে, অর্থাৎ প্রাচ্য-প্রতীচ্যের ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ ইমাম ও আলিমদের মতে তারাবীহ - এর রাকআত সংখ্যা বিশ (+ ৩ রাকআত বিতর)।
ক. ইমাম আবু হানিফা, মালিক, শাফি‘ঈ, আহমদ ইবন হাম্বল ও দাউদ জাহেরীর (রাহ) মতে, অর্থাৎ প্রাচ্য-প্রতীচ্যের ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ ইমাম ও আলিমদের মতে তারাবীহ - এর রাকআত সংখ্যা বিশ (+ ৩ রাকআত বিতর)।
তাদের এ অভিমত মনগড়া নয়। সায়েব ইবন ইয়াজিদ (রাহ) বলেন, উমার রা এর সময়ে তার নির্দেশে উবাই ইবন কা‘ব (রা) মুসল্লিদের নিয়ে মসজিদে নববীতে বিশ রাকআত তারাবীর নামায আদায় করতেন।
খ. ইমাম মালিক (রাহ) এর এমন একটি মত পাওয়া যেখানে তিনি বলেছেন, তারাবীহ এর নামায ৩৬ রাকআত। ইবন রুশদ বলেন, এটি ইমাম মালিকের পুরনো মত।
মদীনাবাসীর আমলকে এক্ষেত্রে তিনি দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। উমার ইবন আবদুল আযীয (রাহ) ও তৃতীয় খলিফা উসমান (রা) এর পুত্র আবান (রাহ) এর গভর্নরীর সময় মদিনার মসজিদে ৩৬ রাকআত (+ ৩ রাকআত বিতর) নামায আদায় করা হত। প্রকৃত ব্যাপার ছিল এই যে, মদিনায় বিশ রাকআত তারাবী ই চালু ছিল।
ওই সময় মক্কাবাসীরা ২০ রাকআত তারাবীহ সালাতের প্রতি চার রাকআত পরবর্তী বিশ্রামের সময় সাত চক্কর তাওয়াফ করতেন, তবে শেষ বার অর্থাৎ বিশ রাকআত পূরণ হয়ে যাওয়ার পর তারা তাওয়াফ করতেন না। অর্থাৎ ২০ রাকআত তারাবীহ এর মাঝখানে তারা চার বার তাওয়াত করতেন। প্রতিবার তাওয়াফের পর তারা দু’ রাকআত তাওয়াফের সুন্নাত নামায (তারাবীহ নয়) আদায় করতেন।
এভাবে ২০ রাকআত তারাবীহ আদায় করতে গিয়ে তাদের ২৮ রাকআত সালাত আদায় হয়ে যেত। মদিনাবাসী দেখলেন, তাদের তাওয়াতের সুযোগ নেই, তখন তারা ৮ রাকআত এর পরিবর্তে ১৬ রাকআত অতিরিক্ত তারাবীহ এর সালাত আদায় করতে শুরু করেন, ফলে তাদের তারাবীহ নামাযের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৬ এ। তাঁদের এ আমলও মনগড়া নয়।
কারণ রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন, রাতের সালাত দুই রাকআত, দুই রাকআত; যখন তুমি সুবহে সাদেক হয়ে যাওয়ার ভয় হবে তখন বিতর হিসেবে এক রাকআত যোগ করে নেবে। অর্থাৎ দুই রাকআত রাকআত করে যত ইচ্ছা রাতের নফল নামায আদায় করা যাবে।
গ. আধুনিক যুগের মুহাদ্দিস আলবানী (রাহ) এর মতে তারাবীহ এর নামায আট রাকআত। শুধু তাই নয়, তাঁর মতে, আট রাকআত এর বেশি তারাবীহ আদায় করা যাবে না, যেমন জুহরের ফরয নামায চার রাকআত এর বেশি আদায় করা যাবে না।
তার দলীল হল আয়িশা (রা) এর হাদীস, তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) রমাদানে বা তার বাইরে ১১ রাকআতের (৮+৩) বেশি রাতের নামায আদায় করতেন না। (বুখারি)
ঘ. বর্তমান যমানার সৌদি আলিমগণ আলবানী সাহেবের একরৈখিক অনড়তা সমর্থন করেননি। পূর্ববর্তী আলিমগণের মতামত ও হাদীসের সমন্বয়ের আলোকে তারা বলেন, তারাবীহ নামাযের রাকআত সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়া অনুচিত। এটি ৮ বা ২০ বা ৩৬ রাকআতে আদায় করা যেতে পারে।
বস্তুতঃ তারাবীহ এর নামাযের রাকআত সংখ্যা নির্ধারণ করলেও পূর্ববর্তী কোন ইমাম বা আলিম এ বিষয়ে অনড় অবস্থান গ্রহণ করেননি।
ইমাম আবু হানিফা বলেছেন, কেউ যদি ইমাম মালিক (রাহ) এর মতানুসারে ৩৬ রাকআত তারাবীহ আদায় করতে চায় সে সুযোগ তার আছে; সেক্ষেত্রে ২০ রাকআত জামাতে আদায় করে বাকি ১৬ রাকআত একাকী আদায় করবে।
ইমাম শাফি‘ঈ বলেন, চাইলে ওই ১৬ রাকআতও জামাতে আদায় করতে পারবে। সহীহুল বুখারিতে বর্ণিত আয়িশা (রা) হাদিসটি শত শত বছর ধরে ওই গ্রন্থে বিদ্যমান, ওটি আজ প্রকাশিত হয়নি। আলিমগণ সেটি অধ্যয়ন করেছেন শত শত বছর ধরে। তবে স্বাভাবিকভাবেই তারা ওই হাদিসকে তারাবীহ এর জন্য প্রযোজ্য বলে গ্রহণ করেন নি।
কারণ তাতে বলা হয়েছে ৮ রাকআত নামায রাসূলুল্লাহ (সা) রমাদান ও রমাদানের বাইরে আদায় করতেন। এটিকে তারা তাহাজ্জুদ নামায বলে চিহ্নিত করেছেন। কারণ তা সব মাসে আদায় করা হয়। আর রমাদান ব্যতীত তারাবীহ আদায় করা হয় না। তবুও হানাফী মাযহাবের কোন কোন কিতাবে এই হাদীসকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কোন কোন আলিম বলেছেন, তারাবীহ এর নামায বিশ রাকআত, এর মাঝে ৮ রাকআত সুন্নাত, বাকি ১২ রাকআত মুস্তাহাব।
সারকথা
ক. পূর্ব-পশ্চিমের ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠ আলিমের মতে, তারাবীহ এর নামায বিশ রাকআত।
খ. মুহাদ্দিস আলবানী (রাহ) ব্যতীত আর কোন আলিম তারাবীহ এর নামায আট রাকআত এ সীমাবদ্ধ করেননি।
গ. আলিমগণ তারাবীহ নামাযের রাকআত সংখ্যা নির্ধারণে মত প্রকাশ করলেও কমবেশি সালাত আদায়কে নিন্দনীয় মনে করেননি।
অতএব আমরা যথাযথভাবে তারাবীহ আদায়ে সচেষ্ট হব। অবশ্যই সালাতের যথাযথ হক আদায় করে বিশ রাকআত আদায়ে সচেষ্ট হব। কেউ ৮ রাকআত আদায় করলে কিছুতেই নিন্দা করা যাবে না। তারাবীহ আদায় করা সুন্নাত, আর এ নিয়ে অশোভন বাকবিতণ্ডা ও ঝগড়াঝাটি করা গোনাহ। আসুন! শরিআহ প্রদত্ত ঐচ্ছিকতা ও ব্যাপকতার আওতায় রকমারিত্বের সৌন্দর্য উপভোগ করি।
Courtesy: Zubair Ehsan Hoque Sir
Courtesy: Zubair Ehsan Hoque Sir
No comments:
Post a Comment
Thanks for your comment.