মেলবোর্নের ডায়রি-৩
১. ‘তুলনা করতে আমি বরাবরই ভালবাসি। তাই কোন কিছু করার আগে ‘তুলনা’ বিষয়টিকে একটু বেশি গুরুত্ব দেই আমি। এই যেমন ধরেন, বাংলাদেশের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার তুলনা বা আমার সাবেক বাসস্থান ঢাকার সঙ্গে বর্তমান বাসস্থান মেলবোর্নের বিভিন্ন দিক নিয়ে আমি প্রায়ই নিজে নিজে তুলনা করার চেষ্টা করি। অনেকে এটাকে পাগলামি বলে মন করলেও আমি তা করে আনন্দ পাই। এ ধারা সম্ভবত ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। যাহোক আমার এ তুলনাপ্রিয় স্বভাবকে খোঁচা দিয়ে এক বন্ধু জানতে চাইলেন, তো ঢাকা ও মেলবোর্নের মধ্যে তুলনা করে কী পেলেন’? প্রত্যুত্তরে আমি প্রিয় এক কবির কবিতা আওড়ালাম ‘ঢাকা বসবাসের জন্য অসাধারণ এক শহর- অবশ্য আপনি যদি কাক হয়ে জন্মান’।আমিতো কাকই।না কী?
২. এবার আসি আসল কথায়, সপ্তাহে টানা পাঁচদিন ক্লাস ও কাজ করে তিলোত্তমা ও চির যৌবনা এ নগরী যখনা বিস্বাদ ঠেকে তখন ছুটির দিন দুটি সত্যিই জীবনকে ভিন্ন আঙ্গিকে দেখার সুযোগ করে দেয়। সপ্তাহে শনি-রবিবার যেন একটি একটি রমজানের ঈদ। তাই এ দুইদিনে একটু বেশি রিলাক্স করার চেষ্টা করি। এ যেন দুদিনে পাঁচদিনকে ভুলে থাকার তুমুল চেষ্টা।রিলাক্সের অংশ হিসেবে এ দুইদিনে যত ধরনের দাওয়াত পাই তা খাওয়ার চেষ্টা করি। যাহোক আমার আরএমআইটি ইউনিভার্সিটির অস্ট্রেলিয় বন্ধু ডেনভার গতকাল তার বাসায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিল রাতের খাওয়ার জন্য। এখানে বলে রাখা ভাল যে, ডেনভার একজন ছোটখাটো মাল্টিকালচর বিশেষজ্ঞও।
যথাসময়ে গিয়ে ডেনভরের বাসায় উপস্থিত হলাম।সেখানে আমিসহ মোট নয়জন অতিথি ছিলেন। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো অতিথিদের মধ্যে ফিলিস্তিন, বেলুচিস্তান, অরুণাচল, তাইওয়ান ও জিংজিয়ানের বাসিন্দাও ছিল। খাওয়া শেষে আমাদের মধ্যে দারুণ আড্ডা জমে উঠল।সে আড্ডায় রাজনীতি, অর্থনীতি, পরিবর্তন, ক্রীড়া, সংগীতসহ বিভিন্ন সমকালীন বিভিন্ন বিষয় উঠে আসল। তবে রাজনৈতিক আলোচনাটি ছিল সবচেয়ে জমজমাট। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো ফিলিস্তিনি, বেলুচিস্তান, অরুণাচল, তাইওয়ান ও জিংজিয়ানের বন্ধুরা বাংলাদেশের জন্ম ও প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বেশ ভাল তথ্য হাজির করেছেন আলোচনায়। শুনে আমি বুঝেছি তারা বাংলাদেশ ও গত সিকি শতাব্দিতে স্বাধীন হওয়া দেশগুলোর রাজনীতি সম্পর্কে বেশ ওয়াকিফহাল। তবে আলোচনায় ধরণ ভিন্ন হলেও এদের প্রত্যেকের কথার সুরে ছিল হতাশা ও দীর্ঘশ্বাস।পাঁচজনেরই আলোচনার মূলকথা ছিল একজন সঠিক লিডারের অভাবেই তারা আজও পরাধীন; উপযুক্ত নেতা পায়নি বলেই স্বাধীনতার সুখ তাদের কাছে সুদূর পরাহত। আদৌ সে নেতা তারা পাবে কীনা যে তাদের স্বাধীন ভুখন্ড উপহার দিতে পারবে- সে বিষয়েও তাদের সন্দেহ রয়েছে। তাই ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা গেছে তাদের চরম দুশ্চিন্তা।তাদের প্রত্যেকেরই শেষ চাওয়া হলো অন্তত মৃত্যুর আগে যেন নিজ নিজ স্বাধীন দেশে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করতে পারা। রাত বাড়তে লাগলো আর আমাদেরও বিদায় নেয়ার পালা। পরস্পরকে বিদায় জানিয়ে বের হলাম বাসার উদ্দেশ্যে। ট্র্রেনে বসে আনমনেই ভাবলাম পুরো আলোচনাটি। এরপর নিজের অজান্তেরই স্বস্তির নি:শ্বাস ফেললাম। এ স্বস্তি ছিল মুক্তির; এ স্বস্তি স্বাধীন ভুখণ্ডের, এ স্বস্তি বাধামুক্ত জীবনের । আমাদের হয়তো অনেক কিছুই নেই কিন্তু একটি স্বাধীন দেশ রয়েছে। যেখানে কায়েমী শক্তির হাতে নিপীড়িত হতে হয়না।
তারপর মনে মনে ধন্যবাদ জানালাম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সময়োপযোগী নেতৃত্ব না দিলে হয়তো স্বাধীনতা নামের পরম প্রত্যাশিত বস্তুটি আমাদের কাছেও অধরাই থাকতো। দাসত্বের জিঞ্জির থাকতো দেহে আর দীর্ঘশ্বাসগুলো দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতো অজানা আতঙ্কে। এটাই সম্ভবত স্বাধীনতার সুখ।
যথাসময়ে গিয়ে ডেনভরের বাসায় উপস্থিত হলাম।সেখানে আমিসহ মোট নয়জন অতিথি ছিলেন। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো অতিথিদের মধ্যে ফিলিস্তিন, বেলুচিস্তান, অরুণাচল, তাইওয়ান ও জিংজিয়ানের বাসিন্দাও ছিল। খাওয়া শেষে আমাদের মধ্যে দারুণ আড্ডা জমে উঠল।সে আড্ডায় রাজনীতি, অর্থনীতি, পরিবর্তন, ক্রীড়া, সংগীতসহ বিভিন্ন সমকালীন বিভিন্ন বিষয় উঠে আসল। তবে রাজনৈতিক আলোচনাটি ছিল সবচেয়ে জমজমাট। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো ফিলিস্তিনি, বেলুচিস্তান, অরুণাচল, তাইওয়ান ও জিংজিয়ানের বন্ধুরা বাংলাদেশের জন্ম ও প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বেশ ভাল তথ্য হাজির করেছেন আলোচনায়। শুনে আমি বুঝেছি তারা বাংলাদেশ ও গত সিকি শতাব্দিতে স্বাধীন হওয়া দেশগুলোর রাজনীতি সম্পর্কে বেশ ওয়াকিফহাল। তবে আলোচনায় ধরণ ভিন্ন হলেও এদের প্রত্যেকের কথার সুরে ছিল হতাশা ও দীর্ঘশ্বাস।পাঁচজনেরই আলোচনার মূলকথা ছিল একজন সঠিক লিডারের অভাবেই তারা আজও পরাধীন; উপযুক্ত নেতা পায়নি বলেই স্বাধীনতার সুখ তাদের কাছে সুদূর পরাহত। আদৌ সে নেতা তারা পাবে কীনা যে তাদের স্বাধীন ভুখন্ড উপহার দিতে পারবে- সে বিষয়েও তাদের সন্দেহ রয়েছে। তাই ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা গেছে তাদের চরম দুশ্চিন্তা।তাদের প্রত্যেকেরই শেষ চাওয়া হলো অন্তত মৃত্যুর আগে যেন নিজ নিজ স্বাধীন দেশে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করতে পারা। রাত বাড়তে লাগলো আর আমাদেরও বিদায় নেয়ার পালা। পরস্পরকে বিদায় জানিয়ে বের হলাম বাসার উদ্দেশ্যে। ট্র্রেনে বসে আনমনেই ভাবলাম পুরো আলোচনাটি। এরপর নিজের অজান্তেরই স্বস্তির নি:শ্বাস ফেললাম। এ স্বস্তি ছিল মুক্তির; এ স্বস্তি স্বাধীন ভুখণ্ডের, এ স্বস্তি বাধামুক্ত জীবনের । আমাদের হয়তো অনেক কিছুই নেই কিন্তু একটি স্বাধীন দেশ রয়েছে। যেখানে কায়েমী শক্তির হাতে নিপীড়িত হতে হয়না।
তারপর মনে মনে ধন্যবাদ জানালাম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। সময়োপযোগী নেতৃত্ব না দিলে হয়তো স্বাধীনতা নামের পরম প্রত্যাশিত বস্তুটি আমাদের কাছেও অধরাই থাকতো। দাসত্বের জিঞ্জির থাকতো দেহে আর দীর্ঘশ্বাসগুলো দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতো অজানা আতঙ্কে। এটাই সম্ভবত স্বাধীনতার সুখ।
মেলবোর্নের ডায়রি- ৪
একটি উত্তরাধুনিক মৃত্যু ও পশ্চিমের শেষকৃত্যু
আমার লেবানিজ বন্ধু জাফজানের ছিয়াশি বছর বয়সী প্রতিবেশী মিস্টার হ্যানসেনের মৃত্যুর সংবাদ পেলাম গতকাল। জাফজান প্রায়ই হ্যানসেনের গল্প করতো। জাতিকে ইহুদি হ্যানসেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বৃটেনের হয়ে জার্মানির বিরুদ্ধে ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধা ছিলেন। বৃটেন, ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও অস্ট্রেলিয়াসহ মোট সাতটি দেশের নাগরিক ছিলেন তিনি। কালো বিদ্বেষী এ লোকটির প্রবল ভালবাসা ছিল আরবদের প্রতি।
আরবপ্রীতির কারণেই জাফজানের কাছে হ্যানসেন প্রিয় হয়ে উঠে। নিয়মিতভাবে ইসরায়েলকে অর্থসাহায্য দিলেও জাফজানসহ অনেক মেলবোর্নে বসবাসরত অনেব
আরব লোকের সঙ্গে তার ভাল সম্পর্ক ছিল।হ্যানসেন অনেকগুলো গুণের অধিকারী ছিলেন।
যেমন: কুকুর, বিড়াল ও খরগোসের প্রতি ছিল তার অকৃত্রিম ভালবাসা। এজন্য তার বিশাল বাড়িতে অনেকগুলো কুকুর, বিড়াল ও খরগোস নিয়ে একাই থাকতেন তিনি। তবে তার একটা বিশেষ শখ ছিল আর তা হলো তার চেয়ে বয়সে তিনগুন ছোট বয়সী মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা। অবশ্য ছয়মাসের বেশি কাউকেই তিনি তার বন্ধুর তালিকায় রাখতেন না।
এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে মসজিদ নির্মাণ বা আরব রিফিউজিদের কল্যাণে বিভিন্ন ফান্ডে তিনি নিয়মিত অর্থ সাহায্য করতেন।
যাহোক গতকাল তার মৃত্যুর সংবাদ শুনলেও পরে জেনেছি তার মৃত্যু হয়েছে অন্তত তিনদিন আগে। বিশাল খোলা প্রান্তরের মাঝখানে প্রকাণ্ড বড় একটি বাড়িতে একা বসবাস করার কারণে তার মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হতে অন্তত তিনদিন লেগেছে।
পুলিশ এসে বাড়ির দরজা ভেঙে তার লাশ উদ্ধার করেছে।
তার ফোন, ডায়রি, ইমেইল ও পরিচিতদের সূত্র ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বসবাস করা তার স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে শেষকৃত্য করার ব্যাপারে। যুক্তরাষ্ট্রের আটলা্ন্টায় অবস্থানকারী বড় পুত্র ম্যাক সোজা জানিয়ে দিয়েছে মাত্র দুদিন পর সে তার নতুন জোটানো স্পেনিস গার্লফেন্ডকে নিয়ে সে কিউবার হাভানায় ছুটি কাটাতে যাচ্ছে, সু্ইডেনে অবস্থানরত ছোট ছেলে গাব্রিয়েল তার দ্বিতীয় মাস্টার্সের থিসিস নিয়ে ব্যস্ত ও হন্ডুরাসের সোফিয়াতে বসবাসকারী একমাত্র মেয়ে ইসবেলা তার কলম্বিয়ান তৃতীয় স্বামীকে শিগগির ডিভোর্স দেবে, তাই কাগজপত্র রেডি করা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে বলে পুলিশকে সোজা জানিয়ে দিয়েছে।
এছাড়া হ্যানসেনের বেঁচে থাকা তৃতীয় স্ত্রী তেলআবিব থেকে জানিয়েছেন তিনি এখন আইজ্যাক রবিনের নামে হেবরনে গড়া বৃদ্ধাশ্রম ব্যবস্থাপনা নিয়ে দম ফেলার ফুসরত পাচ্ছেন না। সুতরাং তারা কেউ মিস্টার হ্যানসেনের শেষকৃত্যে অাসতে পারছেন না।
পরিশেষে বাধ্য হয়ে পুলিশ মেলবোর্নের শেষকৃত্য ব্যবস্থাপনাকারী প্রতিষ্ঠান ‘হবসন পলবেয়ারার কোম্পানি লিমিটেড’ কে লাশ হস্তান্তর করে দাফনের দায়িত্ব দেন। তারার হ্যানসেনের লকারে থাকা টাকার বিনিময়ে শেষকৃত্যের অংশ হিসেবে লোক ভাড়া করে কান্নাকাটির ব্যবস্থাসহ আনুষঙ্গিক সব কিছুর ব্যবস্থা করে লাশ দাফন করবেন।
হ্যানসেনের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী পুলিশ তার কুকুর, বিড়াল ও খরগোসগুলোকে ‘এলিম্যাল ওয়ার্ল্ড’ নামক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে, বাড়িটি আরব উদ্বাস্তুদের ও ব্যাংকে রক্ষিত অর্থগুলো ওয়েস্ট অস্ট্রেলিয়ান মস্ক (মসজিদ) সোসাইটিকে দান করে দেন।
জাফজানের কাছ থেকে সব শোনার পর কী মন্তব্য করবো বুঝতে পারছিনা।
উন্নত বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর সিনারিওটি মোটামুটি এরকম। কারো খবর কেউ রাখেনা। সবাই ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদে বিশ্বাসী। একাকী বসবাসেই তারা বেশি সুখ পায়। জাফজানকে দেখলাম সামান্য মন খারাপ করেছে।
তা দেখে আমি চোখ বন্ধ করে মনে মনে হ্যানসেনের আত্মার শান্তি কামনা করে যিহোভার (ইহুদীদের ঈশ্বর ) কাছে তার হেভেন কামনা ও মসেসের (হযরত মুসা আ:) কাছে প্যারাডাইসে তার চিরকালীন প্রশান্তির জন্য সুপারিশের আবেদন জানালাম।
সব শুনে তৃতীয় বিশ্বের দারিদ্র্র্যপীড়ি আমি অবোধ আর কী বা করতে পারি একটি উত্তরাধুনিক মৃত্যু ও শেষকৃত্যের ব্যাপারে! সব্বে স্বত্ত্বা সুখী হন্তু!
একটি উত্তরাধুনিক মৃত্যু ও পশ্চিমের শেষকৃত্যু
আমার লেবানিজ বন্ধু জাফজানের ছিয়াশি বছর বয়সী প্রতিবেশী মিস্টার হ্যানসেনের মৃত্যুর সংবাদ পেলাম গতকাল। জাফজান প্রায়ই হ্যানসেনের গল্প করতো। জাতিকে ইহুদি হ্যানসেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বৃটেনের হয়ে জার্মানির বিরুদ্ধে ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধা ছিলেন। বৃটেন, ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও অস্ট্রেলিয়াসহ মোট সাতটি দেশের নাগরিক ছিলেন তিনি। কালো বিদ্বেষী এ লোকটির প্রবল ভালবাসা ছিল আরবদের প্রতি।
আরবপ্রীতির কারণেই জাফজানের কাছে হ্যানসেন প্রিয় হয়ে উঠে। নিয়মিতভাবে ইসরায়েলকে অর্থসাহায্য দিলেও জাফজানসহ অনেক মেলবোর্নে বসবাসরত অনেব
আরব লোকের সঙ্গে তার ভাল সম্পর্ক ছিল।হ্যানসেন অনেকগুলো গুণের অধিকারী ছিলেন।
যেমন: কুকুর, বিড়াল ও খরগোসের প্রতি ছিল তার অকৃত্রিম ভালবাসা। এজন্য তার বিশাল বাড়িতে অনেকগুলো কুকুর, বিড়াল ও খরগোস নিয়ে একাই থাকতেন তিনি। তবে তার একটা বিশেষ শখ ছিল আর তা হলো তার চেয়ে বয়সে তিনগুন ছোট বয়সী মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করা। অবশ্য ছয়মাসের বেশি কাউকেই তিনি তার বন্ধুর তালিকায় রাখতেন না।
এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে মসজিদ নির্মাণ বা আরব রিফিউজিদের কল্যাণে বিভিন্ন ফান্ডে তিনি নিয়মিত অর্থ সাহায্য করতেন।
যাহোক গতকাল তার মৃত্যুর সংবাদ শুনলেও পরে জেনেছি তার মৃত্যু হয়েছে অন্তত তিনদিন আগে। বিশাল খোলা প্রান্তরের মাঝখানে প্রকাণ্ড বড় একটি বাড়িতে একা বসবাস করার কারণে তার মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হতে অন্তত তিনদিন লেগেছে।
পুলিশ এসে বাড়ির দরজা ভেঙে তার লাশ উদ্ধার করেছে।
তার ফোন, ডায়রি, ইমেইল ও পরিচিতদের সূত্র ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বসবাস করা তার স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে শেষকৃত্য করার ব্যাপারে। যুক্তরাষ্ট্রের আটলা্ন্টায় অবস্থানকারী বড় পুত্র ম্যাক সোজা জানিয়ে দিয়েছে মাত্র দুদিন পর সে তার নতুন জোটানো স্পেনিস গার্লফেন্ডকে নিয়ে সে কিউবার হাভানায় ছুটি কাটাতে যাচ্ছে, সু্ইডেনে অবস্থানরত ছোট ছেলে গাব্রিয়েল তার দ্বিতীয় মাস্টার্সের থিসিস নিয়ে ব্যস্ত ও হন্ডুরাসের সোফিয়াতে বসবাসকারী একমাত্র মেয়ে ইসবেলা তার কলম্বিয়ান তৃতীয় স্বামীকে শিগগির ডিভোর্স দেবে, তাই কাগজপত্র রেডি করা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে বলে পুলিশকে সোজা জানিয়ে দিয়েছে।
এছাড়া হ্যানসেনের বেঁচে থাকা তৃতীয় স্ত্রী তেলআবিব থেকে জানিয়েছেন তিনি এখন আইজ্যাক রবিনের নামে হেবরনে গড়া বৃদ্ধাশ্রম ব্যবস্থাপনা নিয়ে দম ফেলার ফুসরত পাচ্ছেন না। সুতরাং তারা কেউ মিস্টার হ্যানসেনের শেষকৃত্যে অাসতে পারছেন না।
পরিশেষে বাধ্য হয়ে পুলিশ মেলবোর্নের শেষকৃত্য ব্যবস্থাপনাকারী প্রতিষ্ঠান ‘হবসন পলবেয়ারার কোম্পানি লিমিটেড’ কে লাশ হস্তান্তর করে দাফনের দায়িত্ব দেন। তারার হ্যানসেনের লকারে থাকা টাকার বিনিময়ে শেষকৃত্যের অংশ হিসেবে লোক ভাড়া করে কান্নাকাটির ব্যবস্থাসহ আনুষঙ্গিক সব কিছুর ব্যবস্থা করে লাশ দাফন করবেন।
হ্যানসেনের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী পুলিশ তার কুকুর, বিড়াল ও খরগোসগুলোকে ‘এলিম্যাল ওয়ার্ল্ড’ নামক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে, বাড়িটি আরব উদ্বাস্তুদের ও ব্যাংকে রক্ষিত অর্থগুলো ওয়েস্ট অস্ট্রেলিয়ান মস্ক (মসজিদ) সোসাইটিকে দান করে দেন।
জাফজানের কাছ থেকে সব শোনার পর কী মন্তব্য করবো বুঝতে পারছিনা।
উন্নত বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর সিনারিওটি মোটামুটি এরকম। কারো খবর কেউ রাখেনা। সবাই ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদে বিশ্বাসী। একাকী বসবাসেই তারা বেশি সুখ পায়। জাফজানকে দেখলাম সামান্য মন খারাপ করেছে।
তা দেখে আমি চোখ বন্ধ করে মনে মনে হ্যানসেনের আত্মার শান্তি কামনা করে যিহোভার (ইহুদীদের ঈশ্বর ) কাছে তার হেভেন কামনা ও মসেসের (হযরত মুসা আ:) কাছে প্যারাডাইসে তার চিরকালীন প্রশান্তির জন্য সুপারিশের আবেদন জানালাম।
সব শুনে তৃতীয় বিশ্বের দারিদ্র্র্যপীড়ি আমি অবোধ আর কী বা করতে পারি একটি উত্তরাধুনিক মৃত্যু ও শেষকৃত্যের ব্যাপারে! সব্বে স্বত্ত্বা সুখী হন্তু!
No comments:
Post a Comment
Thanks for your comment.