Love for Beloved Chhayani Union

Monday, 20 June 2016

আজকে একটা ঘটনা শেয়ার করবো। এক প্রবাসী আপুর জীবন থেকে নেয়া। পড়ুন তাহলে-----

Post Collected from GBC Fb Group

আজকে একটা ঘটনা শেয়ার করবো। এক প্রবাসী আপুর জীবন থেকে নেয়া। পড়ুন তাহলে-----
আমি জানি, আমার স্ট্যাটাস যারা রেগুলার পড়ে, তাদের মধ্যে এমন অনেকে আছে, যারা ইয়াং, লাইফের ভয়ংকর রকম টালমাটাল সময়ের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে। নিজের জীবন থেকে ঘটনাটা লিখছি এই আশায়, এই ঘটনা পড়ে যদি তারা একটু হলেও রিয়েলাইজ করে, খারাপ সময় ভাল সময় এসব লাইফের অংশ। যে সময়টাকে মনে হচ্ছে, লাইফে এর চেয়ে খারাপ আর কিছু হতে পারেনা, সে সময়টাও একসময় পার হয়ে যায়।
তারা যেন আবার নতুন করে বিশ্বাস করতে পারে প্রতিটা আগামী দিন এক একটা যাদুর বাকসো! সে বাক্সের ভিতর কত যে সারপ্রাইজ লুকিয়ে আছে, তা ঐ আগামীদিনেই জানা সম্ভব! তাই আগামীদিনের জন্য বেঁচে থাকতে হয়। বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হয়। আজকেই মরে যাওয়ার চেষ্টা করতে নেই, নিজে নিজে মরে যেতে নেই।
আমি খুব বিরানী-পাগল!
কোথাও দাওয়াতে গেলে, বিরানী থাকলে আমি আর কোন কিছুর দিকে তাকিয়েও দেখি না। সিডনীতে ভাবীরাও জানেন আমি কী পরিমান বিরানী পছন্দ করি। তাই কারো বাসায় গেলে, যদি বাসী-বিরানিও থাকে, তাও আমাকে জিজ্ঞেস করতে ভুলেন না, খাবো কিনা!
আর আমি?
হে হে, বিরানী বাসি হলে তো আরো মজা!
(আমার মেয়েদের বাবা দু'চোখে দেখতে পারেনা বাসী খাবার)
তো, বিয়ের পর পর আমার স্বামী রিয়েলাইজ করলো, আমি যতই রাগ করি, আকাশ-পৃথিবী ভাংগা চরম রাগ, কাছে এসে সে যদি একটু সফট করে বলে "বিরানী খেতে যাবা? সিজলিং এর ঐ বিরানীটা, যেটা তোমার খুব ভাল লাগে!"
ব্যাস! হয়েছে তো? বিরানীর কথা বললে কি আর রাগ ধরে রাখা যায়?
একবার কোনদিন যেন ক্লাস শেষ করে বের হচ্ছি ইউনি থেকে। ভাবলাম আব্বাই (শ্বশুর) হয়তো নিতে আসবেন নামায পড়তে যাওয়ার পথে। বের হয়ে দেখি, ওম্মা ভদ্রলোক নিতে এসেছেন! সেদিন দুপুরে কোন কারনে খাওয়া হয়নি। পেটে চরম ক্ষুধা। আমার চেহারায় হয়তো ক্ষুধার ছাপ পড়েছিলো।
এই একটা জিনিষ পৃথিবীতে, আমি ক্ষুধা সহ্য করতে পারিনা! সেই ছোটবেলা থেকেই। দু' দু'টা সন্তান জন্ম দিয়ে দিয়েছি, এখনো আমি ক্ষুধা সহ্য করতে পারিনা!
তো আমার চেহারা দেখেই মনে হয়, ভদ্রলোক বাসায় নিয়ে না গিয়ে বিরানী খেতে নিয়ে গেলেন আমাকে। গোগ্রাসে খাচ্ছি! হঠাৎ করে ভদ্রলোক মুচকি হাসতে হাসতে বললেন 'আলহামদুলিল্লাহ'। খাওয়া থামিয়ে অবাক হয়ে বললাম, হঠাৎ আলহামদুলিল্লাহ বললে কেনো? ভদ্রলোক মুচকি হাসি ধরে রেখেই উত্তর দিলেন, 'আল্লাহ'র প্রশংসা করছি। কারন আল্লাহ আমাকে অন্ততঃ এতটুকু সামর্থ্য দিয়েছেন যে তুমি যদি চাও তাহলে প্রতিদিন অন্ততঃ এক বেলা তোমাকে বিরানী খাওয়াতে পারবো!'
এই হলো আমার খাওয়া-দাওয়ার কিচ্ছা কাহিনী!
তো আসল কাহিনীতে আসি।
তখন মাত্র অনার্স শেষ করে একলা একলা বিদেশ গিয়েছি পড়ালেখা করতে।
এর আগেও অনেকবার লিখেছিলাম, একটা অবিবাহিত মেয়ের আমাদের মত কনজারভেটিভ পরিবার থেকে বিদেশে পড়তে যাওয়া সে সময় অনেকটা অসম্ভব ব্যপার সেপার ছিলো।
কিন্তু ক্ষ্যাপাটে ছিলাম। সবাই সবদিক দিয়েই চেষ্টা করেছিলো আটকাতে। কিন্তু কোন এক অজ্ঞাত কারনে যে আমাকে সবার আগে বাধা দেয়ার কথা ছিলো, সে আব্বুই আগাগোড়া চুপ থেকে আমাকে সাপোর্ট দিয়ে গেছেন। শুধু শুরুর দিকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন 'গায়রে-মুহরিম ছাড়া তুমি যাবা কীভাবে?' ঐ যে বললাম, ক্ষ্যাপাটে ছিলাম।
চটাং চটাং আব্বুকে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম, 'আপনি আমার চে' হাজারগুন বেশী ইসলাম বুঝেন। আপনি খুব ভাল করেই জানেন গায়রে-মুহরিমের অজুহাত স্রেফ অজুহাত মাত্র। আসল কথা বলেন, আপনি আমাকে যেতে দিবেন কী দিবেন না। না দিলে আমি একলাই চলে যাবো। না বলে চলে যাবো। যেভাবে পারি চলে যাবো।'
আব্বু যেতে দিয়েছিলেন।
শুধু যেতে-ই দেননি, নিজে গিয়ে দিয়ে এসেছিলেন।
আজ, এত বছর পর, এখন বুঝি, সে সময় আমাকে বিদেশে যেতে দেয়া আব্বুর জন্য কত মারাত্মক চ্যালেঞ্জ ছিলো। আব্বুর নিজের সার্কেলেই কত চরম প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিলো আব্বুকে। কত জবাবদীহি করতে হয়েছিলো আব্বুকে। কিন্তু আব্বু যেতে দিয়েছিলেন।
আব্বুকে নিয়ে যখন ভাবি, এই জিনিষটা আমার খুব অবাক লাগে। চরম কনজারভেটিভ একটা মানুষ, এতই কনজারভেটিভ যে যখন বলেছিলাম আমি আর নেকাব পরবো না, ডেকে নিয়ে বলেছিলেন 'কেটে টুকরা টুকরা করে কর্ণফূলীতে ভাসায়ে দিবো'।
আব্বুকে যারা চিনে তারা খুব ভাল করেই জানে, আব্বুর মুখ দিয়ে জীবনে কোনোদিন একটা ফালতু কথা বের হয়নি। যা বলেন, মীন করেই বলেন।
ঐ কথার পরও নেকাব খুলে ফেলেছিলাম ঠিকই, কিন্তু কত রাত নির্ঘূম কাটিয়েছি বিছানায়, কাঁথার তলে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে, এই বুঝি আব্বু এক্ষুনি এসে আমাকে তুলে নিয়ে মেরে ফেলে নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে আসেন!
সেই আব্বুই, সেই চরম কনজারভেটিভ আব্বুই, বিশেষ করে আমার ক্ষেত্রে এমন এমন সময় আমার সাথে থেকেছেন, আমার পাশে থেকেছেন, আমার এমন এমন সিদ্ধান্তে আমাকে সাপোর্ট দিয়েছেন, যেগুলো বাংলাদেশের তথাকথিত লিবারাল-ফ্যামিলি গুলোর বাবারাও কিছুতেই মেনে নিবে না!
তো, আমাকে যখন ইউনির ক্যাম্পাসে নামিয়ে দিয়ে আব্বু চলে যাচ্ছেন, হাতে দুইশ রুপী দিয়ে গেলেন। বলে গেলেন, এডমিন জানিয়েছে দ্রুতই স্কলারশিপের টাকা হাতে পেয়ে যাবো। কোনো এক অফিশিয়াল জটিলতায় আমার স্কলারশিপ শুরু হলো না।
তখনও বাংলাদেশী স্টুডেন্ট জেসমিন আপু, বাবলা মামাদের সাথে পরিচয় হয়নি। দেশের কাউকেই চিনিনা। বিদেশের কাউকেও চিনিনা। খুবই দরকারী খরচ পত্রের পর পকেটে আছে মাত্র চৌদ্দ রুপীর মত। আরেকটু বেশী ছিলো। কিন্তু চরম ঠান্ডার জন্য একটা কম্বল কিনতে হয়েছে। ক্ষুধা সহ্য করতে না পেরে শেষে কী যেন একটা কিনে খেয়ে ফেলেছি সকালে।
যক্ষের ধনের মত সেই চৌদ্দ রুপী আগলে রেখেছি আর দিন গুনছি, কখন স্কলারশিপ শুরু হবে! নিজেকে বলছি, এই তো, স্কলারশিপের টাকাটা হাতে পেলেই পেট ভরে খাবো! যা ইচ্ছা হয় তাই খাবো।
যতক্ষন খেতে পারি ততক্ষন খাবো। এমনকি ক্যাম্পাসের খাবারের দোকানে গিয়ে বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেও এসেছি কী কী খাবো।
সন্ধ্যার দিকে আব্বুর ফোন। ফোনের ওপাশে আব্বু যথারীতি ডাক দিলেন, 'বুড়িইইই, কী খাইছো দুপুরে?' ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়- কার লেখা যেনো? সে গদ্যময় ক্ষুধার্ত পৃথিবীতে মোবাইলের স্পীকার এক হাত দিয়ে চাপ দিয়ে ধরে রেখেছিলাম, যেন আমার কান্নার আওয়াজ আব্বু না শুনে।
এত যুদ্ধ করে এসেছি, এত বড় মুখ করে এসেছি, যুদ্ধে জিতেছি, তোমরা আমাকে আটকাতে পারোনি, সেই আমি যদি এখন ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে কাঁদতে বলি, আব্বু ক্ষুধা লাগছে! খাওয়ার টাকা নাই! বিশ্রী হবে বিষয়টা। নিজের ভিতরের ইগো'র চেয়েও বড় কথা হলো, খুব ভাল করেই জানতাম আমার আসার টিকেট, আব্বুর নিজের আসা যাওয়ার টিকেট, ইউনির প্রাথমিক খরচ পত্র, এ সব মিলিয়ে আব্বুর বিশাল একটা খরচ গেছে।
আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারে, তাও পৃথিবীর চরম দুই সৎ মানুষের পরিবারে, যে পরিবারের প্রধানের দুইটা থেকে তিনটার বেশী লুংগি কখনোই কিনেন না আল্লাহ'র কাছে জবাব দিতে হবে তাই, যে পরিবারের কত্রী বিলাসিতা হয়ে যাবে এই ভয়ে নিজের জন্য বছরে একটাও শাড়ি কিনেন কিনা সন্দেহ, অমন ল পরিবারে আমার বিদেশ পড়তে যাওয়াটা যে কত বড় একটা খরচ, আমি যতই ইমম্যাচিউর হই না কেনো ঐ সময়ে, অন্তত এতটুকু বুঝতাম।
আব্বুকে জীবনে অনেক ভয় পেয়েছি। কিন্তু আব্বুকে চরম ভালওবাসি। আব্বু যখন জিজ্ঞেস করলেন, 'বুড়িইইই, কী খাইছো দুপুরে?', জানতাম, যদি বলি গত দুই দিনে স্রেফ একটা নান-রোল খেয়েছি, আব্বু ভীষন কষ্ট পাবে।
খুব কষ্ট পাবে। তাছাড়া ভয়ও আছে, আব্বু যদি বলে, এত কষ্ট করে পড়ার দরকার নেই, চলে আসো!
কোন রকমে কান্না চাপ দিয়ে গলার আওয়াজে হাসি হাসি এনে বললাম, বিরানী খেয়েছি আব্বু! দুপুরে ক্যান্টিনে বিরানী দিয়েছে খেতে।
ডাহা মিথ্যা কথা!
এক- হয়তো পেটের চরম ক্ষুধায় মাথার ভিতর খালি বিরানীর ছবি ভাসছিলো, তাই ধড়াম করে মুখ দিয়ে বিরানীর কথা চলে এসেছে!
দুই- ক্যান্টিনে খেতে হলে মাসের শুরুতেই টাকা দিতে হয়। আমি তখনো স্কলারশিপের টাকার জন্য ওয়েট করছিলাম। টাকাটা পেলে ক্যান্টিনে প্রি-পে করলে, তবেই ক্যান্টিনে ঢুকে খাওয়া যাবে।
আব্বুকে মিথ্যা করে বলে দিলেও, পেট তো আর মিথ্যা বুঝে না। পেট খালি খাবার বুঝে! সন্ধ্যার দিকে দেখি আর সহ্যই করতে পারি না।
গ্লাসের পর গ্লাস পানি খেয়েও, মাথার মধ্যে খালি একটাই শব্দ ঘুরপাক খাচ্ছে, ক্ষুধা! ক্ষুধা! ক্ষুধা! যারা বলে, ক্ষুধার্ত মানুষ যখন অনেকক্ষন বা অনেকদিন ক্ষুধার্ত থাকে, তখন ক্ষুধাটা মরে গিয়ে ম্যারম্যারে হয় যায়, তারা ভুল বলে।
ক্ষুধা হচ্ছে বাচ্চা হওয়ার ব্যাথার মত। বাচ্চা হওয়ার সময় ব্যাথাটা যেমন বাড়তে বাড়তে স্রেফ বাড়তেই থাকে, অথচ এক পর্যায়ে ব্যাথার চরম মাত্রায় ব্যাথাটা numb হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু মোটেও না! ব্যথাটা স্রেফ বাড়তেই থাকে, বাড়তেই থাকে... এক পর্যায়ে গিয়ে মনে হয় এমনকি নিঃশ্বাস নিতে পর্যন্ত চরম ব্যাথা লাগছে...।
ক্ষুধাও তেমন। ক্ষুধার্ত থাকতে থাকতে এক পর্যায়ে মনে হয়, ক্ষুধা শুধু পেটে না। সারা শরীর যেন পেট হয়ে গেছে! সারা শরীর জুড়ে যেন ক্ষুধা!
তখনই সে কাজটা করলাম। জীবনে কোনোদিন ভাবিনি, কোনোদিন ভুলেও ভাবিনি, আমার জীবনেও এমন মুহুর্ত আসবে।
চিটাগাং-এ আমাদের ইউনির ফীমেল ক্যাম্পাসের গলির মুখেই একটা ডাষ্টবিন ছিলো। যতবার দেখতাম টোকাইরা ওখান থেকে খাবার কুড়াচ্ছে, জিনিষ কুড়াচ্ছে, আফসোস হতো। দুঃখ হতো। কিন্তু কখনো রিয়েলাইজ করার মত অবস্থা হয়নি, আসলে ক-ত-টা ক্ষুধায় একজন মানুষ ঐ জঘন্য রকম নোংরা ডাষ্টবিন থেকে খাবার কুড়ায়ে খেতে পারে!
কিছুদিন আগেই খেয়াল করেছিলাম অনেক সময় হলের কেউ কেউ নিজেদের প্লেটের খাবার পুরো না খেয়ে অর্ধেক না খাওয়া খাবারটা কিচেনের সিংক-এর পাশে রেখে যায়। ক্লিনাররা পরদিন এসে ঐ প্লেট পরিষ্কার করে রেখে যায়।
নিজের অজান্তেই কখন, রুম থেকে বের হয়ে কিচেনের দিকে হাঁটতে থাকলাম। অচেনা মানুষের উচ্ছিষ্ট খাবার খেতে যাচ্ছি- সে চিন্তা মাথায় নেই, মাথায় একটাই চিন্তা- কেউ যেন প্লীজ উচ্ছিষ্ট কিছু খাবার প্লেটেই রেখে যায় আজকে!
জীবন মাঝে মাঝে অদ্ভুত খেলা খেলে। এতই অদ্ভুত, চরম irony তে ভরা।
কেউ একজন একটা প্লেট রেখে গিয়েছে। প্লেটের সাইডে অল্প খাবার এখনো আছে।
বিরানী!!
ঠিক আমাদের দেশের বিরানী না, ওরা ফ্রাইড রাইস টাইপের কেমন যেন একটা বিরানী বানায়, ওটা! কেউ একজন খাচ্ছিলো, পুরোটা খেতে না পেরে অল্প রেখে গেছে প্লেটের মধ্যেই।
কেউ দেখে ফেলার আগেই, গোগ্রাসে সে খাবার মুখে দিতে গিয়ে কয়েক লোকমা খাওয়ার পরই বেমক্কা খাবার গলায় বেঁধে গিয়েছিলো। তাড়াতাড়ি পাশের সিংক থেকে পানি খেতে গিয়ে, হঠাৎ এমন কান্না পেয়েছিলো! একদিকে পানি খাচ্ছি, আরেকদিকে কাঁদছি। কাঁদতে কাঁদতেই প্লেটের বাকীটুকু চেটেপুটে খেয়ে ফেললাম।
তারপর এক মুহুর্ত আর দাঁড়াইনি ওখানে। দৌঁড়ে নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে বালিশে মুখ চাপ দিয়ে হুঁ হুঁ করে কেঁদেছিলাম, যেন কান্নার আওয়াজ রুমের বাইরে না যায়। নিজেকে নিজের কাছে এতটাই ছোট মনে হচ্ছিলো, একবার ভাবলাম সুইসাইডই করে ফেলি!
নাহ, সুইসাইড করিনি। জীবনে বেশ কয়েকবার ভেবেছি সুইসাইড করার কথা। জীবনে সুইসাইড করার মত পরিস্থিতিও হয়েছিলো বেশ কয়েকবার। কিন্তু থ্যাঙ্কস আল্লাহ, মনে মনে একদম করে ফেলবো করে ফেলবো এমন ভাবলেও, কখনো আসল সুইসাইড করিনি।
সুইসাইড করলে জাহান্নাম যেতাম- এসব থিউর‍্যাটিক্যাল কথা বাদ। যেটা আমাকে প্রায়ই ভাবায় তা হলো- এই যে আমার দু'টো গোল্লা বাচ্চা আছে, ছোটটা যার কিনা পাঁচ মাস, প্রায় সময় তার মাড়িতে সিড় সিড় উঠলে আমার থুতনি কামড়াঁতে থাকে, প্রায় সময় দু'হাতে আমার চুল ধরে চেহারাটাকে তার নাগালের মধ্যে এনে আমার নাক খেতে চায়, আবার কখনো কখনো দুধ খাওয়ার সময় রাজ্যের বিষ্ময় তার ছোট্ট দুই চোখে এসে জমা হয়,
সে খাওয়া থামিয়ে সে বিষ্ময় ভরা দুই চোখ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে, যেন জীবনে প্রথম সে আমাকে দেখছে এবং যেন আমাকে দেখার জন্যই তার জন্ম হয়েছে!
এই যে আমার বড় মেয়েটা, প্রায় রাতেই মধ্যরাতে পাশ ফিরে আমাকে জড়ায়ে ধরে, তার ছোট ছোট হাতে আমাকে বেড় দিয়ে উঠতে পারে না, তখন দুই পা'র সাহায্য নেয়। ঘুমের মধ্যেই চার হাত পা দিয়ে অক্টোপাসের মত ধরে রাখতে চেষ্টা করে!
কখনো কখনো হঠাৎ তার কী যে মনে হয়, খেলা ফেলে দৌঁড়ে এসে জড়িয়ে ধরে চেহারাটা আমার গায়ে ঘষতে ঘষতে বলে 'ইউ আর দ্য বেষ্ট মাম ইন দ্য হোওওওওওল ওয়ার্ল্ড, মা'!
আমি বিরক্ত হয়ে বলি 'ছাড় তো!, কাজ করছি দেখোনা চোখে?' অথচ বুকের ভিতর কেমন গুড় গুড় করে উঠে! কেমন অদ্ভুত রকমের একটা খুশীতে মনটা তুলার মত হালকা হয়ে যায়!
এই যে ভদ্রলোকটা,
গরমের সময় নিজে যতবার ঠান্ডা পানি ফ্রীজ থেকে বের করে খায়, ততবার আমার জন্যও এক গ্লাস ঢেলে রাখে, জানে গরমের সময় আমি খালি ঠান্ডা পানি খাই। ভোরে উঠে অফিসে যাওয়ার সময় নিজে চা বানিয়ে খেয়ে গেলে আমার জন্যও এক কাপ চা বানিয়ে রেখে যায়, আমি তখন হয়তো দু' মেয়েকে নিয়ে গভীর ঘুম...!
এই যে আব্বু,
যার এখন কথা বলারও শক্তি নেই। পুরো শরীরটাই যার বলতে গেলে প্যারলাইজড হয়ে আছে। তারপরও যে ফোনের ওপাশে অনেক কষ্ট করে ভাংগা ভাংগা জড়ানো স্বরে জিজ্ঞেস করেন 'আমার নানু দুইটা কেমন আছে?' আর আমি বলি 'ওরা আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছে আব্বু'!
লিষ্ট দিতে থাকলে দিতেই থাকতে হবে...!
যেটা আমাকে প্রায়ই ভাবায়, তা হলো- যে সব চরম ভলনারেবল সময়ে সুইসাইড করার কথা ভেবেছিলাম, সুইসাইড করতে চেয়েছিলাম, ভুলেও তো কখনো ভাবিনি, ভবিষ্যতে একসময় আমি এমন করে বিদেশে কলেজে পড়াবো! আমার নিজের একটা গাড়ি থাকবে, যার নাম দিবো পাংখা! একটা ছোট্ট ঘর থাকবে, যার পিছনের উঠানের ঘাসগুলো থেকে খুব ভোরে দাদুর বাড়ির ঘাসের আর গাছের গন্ধ আসবে! দু'টো ফুটফুটে মেয়ে থাকবে! একটা মানুষ থাকবে, যে কারনে অকারনে বিরানী খাওয়াতে নিয়ে যাবে!
জীবন কখনো একরকম যায়না।
তুমি,
যে কিনা এখন ভাবছো, তোমার জীবনের সব দরজা বন্ধ হয়ে গেছে, পুরো পৃথিবী তোমাকে left alone করে রেখে চলে গেছে, আক্ষরিক অর্থেই জীবন এখন তোমার টোটালি মিনিংলেস, ট্রাষ্ট মী, ঐ যে আমি, যে কিনা মানুষের উচ্ছিষ্ট খেয়েছিলাম ক্ষুধার যন্ত্রনায়, নিজের উদাহরন দিয়ে গর্ব করছি না, তোমাকে আশা দিতে চাচ্ছি, তোমাকে একটা কথাই বলতে চাচ্ছি-
প্রতিটা আগামী দিন এক একটা যাদুর বাকসো। সে বাক্সের ভিতর কত যে সারপ্রাইজ লুকিয়ে আছে, তা ঐ আগামীদিনেই জানা সম্ভব। তাই আগামীদিনের জন্য বেঁচে থাকতে হয়। বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হয়। আজকেই মরে যাওয়ার চেষ্টা করতে নেই। নিজে নিজে মরে যেতে নেই...।
LikeShow more reactions
Comment
Comments
Mahmudur Rahman Manik পুরাটাই পড়লাম। আমার জীবনের পাথেও হয়ে রইল
LikeReply23 hrs
Ali Ashraf বাংলাদেশে থেকেই এই রকম কস্ট করা ব্যাক্তির গল্প তার থেকে সরাসরি শুনেছি।
LikeReply22 hrsEdited

No comments:

Post a Comment

Thanks for your comment.

 

SSC Chemistry

SSC Chemistry

 
Blogger Templates